নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) সম্প্রতি বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক গ্রুপ এবং তাদের পরিচালকদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, কর ফাঁকি ও রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্তে নেমেছে। সংস্থাটি ৮ জন পরিচালকসহ ১৭টি প্রতিষ্ঠানের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেয়। ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। এসব অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চালাকালেই দেশত্যাগ করেছেন এশিয়াটিক গ্রুপের উর্ধতন কর্মকর্তারা।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী এশিয়াটিক গ্রুপ ও তাদের বিভিন্ন কোম্পানি ২০০৯ থাকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় বেশিরভাগ বিদেশী ক্লায়েন্টের ৫২ হাজার কোটি টাকার মিডিয়া বাজেট উপর নিয়ন্ত্রন নিয়েছিলো। ম্যারিকো, রবি, ডাবুর, রেকিট, কলগেট, নেসলে, বাংলালিংক, পেপসি, কোকাকোলা সহ বেশিরভাগ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন ভারতীয়। অন্যদিকে ডাব্লিউপিপি গ্রুপের ভারতীয় শাখার একটি সাব এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে কাজ এশিয়াটিক গ্রুপ ওই সব ভারতীয় কোম্পানির কাজ কুক্ষিগত করে।
এছাড়াও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময়ে নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে আয়োজিত সব অনুষ্ঠানের কাজ এশিয়াটিককে দেয়ার ব্যাপারে ভারতীয় দূতাবাসের কুমার নামের একজন কর্মকর্তার সরাসরি ভূমিকা ছিলো। মোদি ও রামনাথের অনুষ্ঠান ও ভারতীয়দের স্বর্ণপদক দেওয়ার ব্যাপারে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলো এই ভারতীয় কর্মকর্তা।
জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় সব মিডিয়া হাউস স্ট্রাগলিং অবস্থায় আছে। এই সুযোগে মিডিয়ার উপর কর্তৃত্ব স্থাপনে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কাজ করে আসছে এশিয়াটিক। হাসিনার পতনের পর কতিপয় মিডিয়ার উপর আওয়ামী মালিকানা নামকাওয়াস্তে পরিবর্তন হলেও এখনো মিডিয়া বাজেটের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এশিয়াটিক গ্রুপের হাতেই রয়ে গেছে।
বিগত সরকারের সময়েই এশিয়াটিক গ্রুপ দুবাইতে এশিয়াটিক ক্রিয়েটিভ সলিউশন এফজেটই নামে আরেকটি কোম্পানি খুলে। মূলত পাচারের অর্থ জমা রাখার জন্য এটি খোলা হয়। অভিযোগ আছে মাসুদা ভাট্টি, নবনীতা চৌধুরী, নিঝুম মজুমদার, অমি রহমান পিয়াল সহ অনেকের ইউটিউব ও ফেইসবুক ক্যাম্পেইনের কন্টেন্ট এশিয়াটিক এর লোকজন বানিয়ে দিচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার স্বর্ণপদক দিয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানগুলো ও স্বর্ণপদক বানানোর দায়িত্বে ছিল এশিয়াটিক গ্রুপ।মুজিব শতবর্ষ, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দুই অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রধান অতিথি করে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল আয়োজন এর ইভেন্ট পার্টনার ছিলো দিল্লির বিশ্বস্ত এশিয়াটিক গ্রুপ। শুধু মুজিব বর্ষের আয়োজনেই ২৩০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়।এইসব অনুষ্ঠানের বেশিরভাগই কামাল আবদুল নাসের ও আসাদুজ্জমান নূরের প্রভাব খাটিয়ে এশিয়াটিক নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।
২০১৮ এর নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য সিআরআই’র পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার জীবনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র বানানোর সিদ্ধান্ত হয়। নসরুল হামিদ বিপু ও রিদওয়ান মুজিব ববির নির্দেশে এশিয়াটিকের ইরেশ যাকের ২০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছিল। এই ডকুমেন্টারির প্রোডাকশন ও স্ক্রিপ্টিং এর দায়িত্বে ছিলো বিপুর ভায়রা গাউসুল আলম শাওন (সাবেক এমডি গ্রে, বর্তমানে ডট বার্থ এর কর্ণধার)
২০২৩ এ ভারত - বাংলাদেশ সরকারের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত মুজিব’ সিনেমার বিশ্বব্যাপি প্রচার এর দায়িত্ব নিয়েছিল এশিয়াটিক গ্রুপ। তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান Mindshare মাইন্ডশেয়ার ও ফরথট পিআরের মাধ্যমে বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়া ব্যাপক পেইড মিডিয়া ক্যাম্পেইন করে তারা। একই ভাবে বিদেশী মিডিয়ায় শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত অর্জন ও আওয়ামী লীগ সরকারের গালভরা উন্নয়নের কল্পকাহিনী নিয়ে ক্যাম্পেইন করে তারা। এইসব কর্মকান্ড এশিয়াটিক এর সহযোগী ভারতীয় প্রিন্সিপাল ডাব্লিউ পিপি গ্রুপের মাধ্যমে অবৈধভাবে পাচারকৃত অর্থ ব্যবহার হয়।