০৪:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

গরিবের ১০ হাজার বস্তা চাল পড়ে আছে গুদামে, চার মাসেও হয়নি বিতরণ

  • আপডেট: ০৪:৩৩:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৮০০৩

 

 

মিঠুন কুমার রায় স্টাফ রিপোর্টার:

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক।

‎ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ভালনারেবল উইমেন বেনিফিটের (ভিডব্লিউবি) সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ করা প্রায় ১০ হাজার বস্তা চাল গুদামে চার মাস ধরে পড়ে আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বারবার নির্দেশনা সত্ত্বেও এই চাল বিতরণ না করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে। কর্মকর্তার এমন অবহেলায় একদিকে যেমন গরিব সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ফিরে যাচ্ছেন, তেমনি গুদামে অতিরিক্ত চাল মজুতের ফলে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও চাপে পড়েছেন।

‎শুধু তা-ই নয়, ইউএনওর চূড়ান্ত করা তালিকায় নাম পরিবর্তন করে অন্য সুবিধাভোগী অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগও উঠেছে ওই মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এতে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সুবিধাভোগী, ইউপি সচিব ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে।

‎এক সপ্তাহ ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আটটি ইউনিয়নে লটারির মাধ্যমে বাছাই করে ভিডব্লিউবির ২ হাজার ৪৫৮ জন সুবিধাভোগী ব্যক্তির তালিকা চূড়ান্ত করে বদলি হয়ে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার দেবনাথ। ওই মাস থেকে সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের মধ্যে ওই চাল বিতরণ করার জন্য নির্দেশনা এবং চালের ডিওতে অনুমোদন দেন পরে যোগদান করা ইউএনও মফিজুর রহমান। কিন্তু চার মাস চলে গেলেও সেই চাল পড়ে আছে গুদামে, বিতরণ করা হয়নি।

‎অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান কয়েক দফায় ডেকে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে চাল বিতরণ করতে বললেও তিনি কর্ণপাত করছেন না। এদিকে আগের ইউএনওর চূড়ান্ত করা তালিকা থেকে প্রায় ২৫০ জনের নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকায় স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা করেছেন মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক। নতুন ইউএনও স্বাক্ষর না করে আগের ইউএনওর চূড়ান্ত করা তালিকা অনুযায়ী চাল বিতরণ করতে নির্দেশ দেন।

‎এদিকে লটারির মাধ্যমে সুবিধাভোগী যাচাই-বাছাইয়ের পর তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুওসুও ইউনিয়ন পরিষদ, ধনতলা ইউনিয়ন পরিষদ ও চাড়োল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক মাস আগে। অভিযোগের বিষয়ে জবাব চাইলেও সন্তোষজনক জবাব দাখিল করতে পারেনিন মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা।

‎ইউপি সচিব ও চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লটারিতে বিজয়ী সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদে আসছেন চাল কবে পাবেন জানার জন্য। মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তর থেকে সঠিক নির্দেশনা না থাকায় কোনো জবাব দিতে পারছেন না তাঁরা। ফলে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে সুবিধাভোগীদের।

‎বালিয়াডাঙ্গী খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা শাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, ‘ভিডব্লিউবি কার্যক্রমের আওতায় সুবিধাভোগীদের জন্য উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বরাদ্দ করা জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাসের ৩০ কেজি ওজনের ৯ হাজার ৮৩২ বস্তা চাল গুদামে পড়ে রয়েছে। বারবার মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে বলার পরও তিনি চালগুলো বিতরণের উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এর মধ্যে নভেম্বরে চাল চলে আসবে। গরিবের চাল আটকে রাখা ঠিক হয়নি। আমরাও নিরুপায়, কিছু করার নেই।’

‎তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা স্বীকার করে নতুন তালিকায় বদলি হওয়া ইউএনওর স্বাক্ষরের জন্য যোগাযোগ করছেন বলে জানালেন উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘তালিকায় স্বাক্ষর হয়ে গেলে চাল বিতরণ শুরু হবে।’ গরিবের চাল এত দিন ফেলে রাখা উচিত কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কিছু করার নেই।’

‎উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, ‘বিতরণের জন্য আনা চাল গুদামে ফেলে রাখার সুযোগ নেই। বারবার বলার পরও চাল বিতরণ করেননি মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা।’ সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ (লিখবেন) করবেন বলে জানান ইউএনও।

‎বদলি হওয়া ইউএনও পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, ‘সুবিধাভোগীদের তালিকায় পূর্বের তারিখ দিয়ে স্বাক্ষরের প্রশ্নই ওঠে না। লটারিতে যাদের নাম উঠেছে, তারাই চাল পাবে।’

‎২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় যোগদান করেন মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক। যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়মের জন্য গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। আট বছরে সাতজন ইউএনও বদলি হলেও তিনি একই কর্মস্থলে দায়িত্বে রয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, পার্শ্ববর্তী উপজেলা রাণীশংকৈলের মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন এই কর্মকর্তা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

গরিবের ১০ হাজার বস্তা চাল পড়ে আছে গুদামে, চার মাসেও হয়নি বিতরণ

আপডেট: ০৪:৩৩:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

 

 

মিঠুন কুমার রায় স্টাফ রিপোর্টার:

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক।

‎ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ভালনারেবল উইমেন বেনিফিটের (ভিডব্লিউবি) সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ করা প্রায় ১০ হাজার বস্তা চাল গুদামে চার মাস ধরে পড়ে আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বারবার নির্দেশনা সত্ত্বেও এই চাল বিতরণ না করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে। কর্মকর্তার এমন অবহেলায় একদিকে যেমন গরিব সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ফিরে যাচ্ছেন, তেমনি গুদামে অতিরিক্ত চাল মজুতের ফলে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও চাপে পড়েছেন।

‎শুধু তা-ই নয়, ইউএনওর চূড়ান্ত করা তালিকায় নাম পরিবর্তন করে অন্য সুবিধাভোগী অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগও উঠেছে ওই মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এতে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সুবিধাভোগী, ইউপি সচিব ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে।

‎এক সপ্তাহ ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আটটি ইউনিয়নে লটারির মাধ্যমে বাছাই করে ভিডব্লিউবির ২ হাজার ৪৫৮ জন সুবিধাভোগী ব্যক্তির তালিকা চূড়ান্ত করে বদলি হয়ে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার দেবনাথ। ওই মাস থেকে সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের মধ্যে ওই চাল বিতরণ করার জন্য নির্দেশনা এবং চালের ডিওতে অনুমোদন দেন পরে যোগদান করা ইউএনও মফিজুর রহমান। কিন্তু চার মাস চলে গেলেও সেই চাল পড়ে আছে গুদামে, বিতরণ করা হয়নি।

‎অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান কয়েক দফায় ডেকে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে চাল বিতরণ করতে বললেও তিনি কর্ণপাত করছেন না। এদিকে আগের ইউএনওর চূড়ান্ত করা তালিকা থেকে প্রায় ২৫০ জনের নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকায় স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা করেছেন মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক। নতুন ইউএনও স্বাক্ষর না করে আগের ইউএনওর চূড়ান্ত করা তালিকা অনুযায়ী চাল বিতরণ করতে নির্দেশ দেন।

‎এদিকে লটারির মাধ্যমে সুবিধাভোগী যাচাই-বাছাইয়ের পর তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুওসুও ইউনিয়ন পরিষদ, ধনতলা ইউনিয়ন পরিষদ ও চাড়োল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক মাস আগে। অভিযোগের বিষয়ে জবাব চাইলেও সন্তোষজনক জবাব দাখিল করতে পারেনিন মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা।

‎ইউপি সচিব ও চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লটারিতে বিজয়ী সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদে আসছেন চাল কবে পাবেন জানার জন্য। মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তর থেকে সঠিক নির্দেশনা না থাকায় কোনো জবাব দিতে পারছেন না তাঁরা। ফলে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে সুবিধাভোগীদের।

‎বালিয়াডাঙ্গী খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা শাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, ‘ভিডব্লিউবি কার্যক্রমের আওতায় সুবিধাভোগীদের জন্য উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বরাদ্দ করা জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাসের ৩০ কেজি ওজনের ৯ হাজার ৮৩২ বস্তা চাল গুদামে পড়ে রয়েছে। বারবার মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে বলার পরও তিনি চালগুলো বিতরণের উদ্যোগ নিচ্ছেন না। এর মধ্যে নভেম্বরে চাল চলে আসবে। গরিবের চাল আটকে রাখা ঠিক হয়নি। আমরাও নিরুপায়, কিছু করার নেই।’

‎তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা স্বীকার করে নতুন তালিকায় বদলি হওয়া ইউএনওর স্বাক্ষরের জন্য যোগাযোগ করছেন বলে জানালেন উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘তালিকায় স্বাক্ষর হয়ে গেলে চাল বিতরণ শুরু হবে।’ গরিবের চাল এত দিন ফেলে রাখা উচিত কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কিছু করার নেই।’

‎উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, ‘বিতরণের জন্য আনা চাল গুদামে ফেলে রাখার সুযোগ নেই। বারবার বলার পরও চাল বিতরণ করেননি মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা।’ সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ (লিখবেন) করবেন বলে জানান ইউএনও।

‎বদলি হওয়া ইউএনও পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, ‘সুবিধাভোগীদের তালিকায় পূর্বের তারিখ দিয়ে স্বাক্ষরের প্রশ্নই ওঠে না। লটারিতে যাদের নাম উঠেছে, তারাই চাল পাবে।’

‎২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় যোগদান করেন মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আবু বেলাল ছিদ্দিক। যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়মের জন্য গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। আট বছরে সাতজন ইউএনও বদলি হলেও তিনি একই কর্মস্থলে দায়িত্বে রয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, পার্শ্ববর্তী উপজেলা রাণীশংকৈলের মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন এই কর্মকর্তা।