০৫:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

“কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলায় জেলা প্রশাসকের অভিযান” ৬ লিস্টার মেশিন আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংশ  

  • আপডেট: ০৩:৪৮:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৮০০৩

সেলিম মাহবুব,ছাতকঃ

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরেফিন টিলা ধ্বংশ করে দিয়েছে পাথর লুটপাটকারী চক্র। পাথরখেকো লোভাতুর মানুষের থাবায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ঐতিহাসিক এ স্থানটি। সুউচ্চ টিলাটি এখন ক্ষতবিক্ষত কঙ্কালসার বিরাণ ভূমিতে পরিনত।

 

সিলেটের বাকি সবকটি কোয়ারি থেকে পাথর চুরি বন্ধ হলেও শাহ আরেফিন টিলায় এখনো চলছে পাথর লুট। টিলার প্রায় ৯০ ভাগ অংশ শেষ করে দিয়েছে চক্রের লোক জন। গত সোমবার সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম সরেজমিনে গিয়ে টিলা ধ্বংশ ও পাথর লুটের প্রমাণ পান। এ সময় অভিযান চালিয়ে ধ্বংস করেছেন পাথর উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত ৬ টি লিস্টার মেশিন।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইসলাম ধর্ম প্রচারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একটি টিলায় বিশ্রাম নিয়েছিলেন হযরত শাহ জালাল (রহ.) এর সফরসঙ্গী হযরত শাহ আরেফিন (রহ.)। প্রায় ৭০০ বছর আগের এই স্মৃতিকে ধরে রাখতে স্থানীয় লোকজন ওই টিলার নাম দেন শাহ আরেফিন টিলা। বিশ্রাম গ্রহণের স্থানটি সংগ্রহ করে তৈরি করা হয়েছিল স্থাপনা। শাহ আরেফিন মোকাম নামে পরিচিত। সেখানে প্রতিবছর হাজার হাজার ভক্ত-আশেকান মিলে ওরস করতেন।

 

১৩৭.৫০ একর আয়তনের টিলাটি একসময় ধর্মীয় স্মৃতি বাহক হিসেবেই পরিচিত ছিল। কিন্তু তিন দশক আগ থেকে ওই টিলা থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা পাথর উত্তোলন শুরু করেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকতে পাথরখেকোদের আগ্রাসন সুউচ্চ টিলা কেটে গভীর গর্ত তৈরি করে পাথর খেকোরা পাথর উত্তোলন শুরু করেন। পাথরখেকোদের থাবায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় সংরক্ষণ করে রাখা শাহ আরেফিনের আসনস্থল।

 

টিলা কেটে পরিবেশ ধ্বংস করার অভিযোগে ২০১৬ সালে পাথর উত্তোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় প্রশাসন। কিন্তু এর পরও থামেনি পাথর লুটের তান্ডব।

 

গত কয়েক মাস ধরে প্রশাসনের সাঁড়াশি অভিযানের কারণে সিলেটের সাদাপাথর ও জাফলংসহ সবকটি কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু শাহ আরেফিন টিলা থেকে চুরি করে পাথর উত্তোলন চালু রাখছে একটি চক্র। রাতের আঁধারে টিলা কেটে পাথর উত্তোলন করে চক্রটির সদস্যরা। টিলা কেটে তৈরি করা গভীর গর্ত থেকে প্রতিদিনই হাজার হাজার ঘনফুট পাথর উত্তোলন করে পাচার করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।

 

পাথর লুটের খবর পেয়ে সোমবার শাহ আরেফিন টিলায় অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম অভিযান চালিয়ে পাথর লুটের প্রমাণ পেলেও হাতেনাতে কাউকে আটক করতে পারেননি। অভিযানকালে পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত ৬টি লিস্টার মেশিন জব্দ করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

 

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম জানান, পাথরখেকোরা ইতোমধ্যে শাহ আরেফিন টিলা ধ্বংস করে ফেলেছে। টিলা ধ্বংস করে তারা পাথর লুট করেছে। এখন থেকে যে কোন মূল্যে ওই টিলা থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখা হবে। যারা শাহ আরেফিন টিলা ধ্বংস করে পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।##

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

“কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলায় জেলা প্রশাসকের অভিযান” ৬ লিস্টার মেশিন আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংশ  

আপডেট: ০৩:৪৮:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

সেলিম মাহবুব,ছাতকঃ

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরেফিন টিলা ধ্বংশ করে দিয়েছে পাথর লুটপাটকারী চক্র। পাথরখেকো লোভাতুর মানুষের থাবায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ঐতিহাসিক এ স্থানটি। সুউচ্চ টিলাটি এখন ক্ষতবিক্ষত কঙ্কালসার বিরাণ ভূমিতে পরিনত।

 

সিলেটের বাকি সবকটি কোয়ারি থেকে পাথর চুরি বন্ধ হলেও শাহ আরেফিন টিলায় এখনো চলছে পাথর লুট। টিলার প্রায় ৯০ ভাগ অংশ শেষ করে দিয়েছে চক্রের লোক জন। গত সোমবার সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম সরেজমিনে গিয়ে টিলা ধ্বংশ ও পাথর লুটের প্রমাণ পান। এ সময় অভিযান চালিয়ে ধ্বংস করেছেন পাথর উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত ৬ টি লিস্টার মেশিন।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইসলাম ধর্ম প্রচারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একটি টিলায় বিশ্রাম নিয়েছিলেন হযরত শাহ জালাল (রহ.) এর সফরসঙ্গী হযরত শাহ আরেফিন (রহ.)। প্রায় ৭০০ বছর আগের এই স্মৃতিকে ধরে রাখতে স্থানীয় লোকজন ওই টিলার নাম দেন শাহ আরেফিন টিলা। বিশ্রাম গ্রহণের স্থানটি সংগ্রহ করে তৈরি করা হয়েছিল স্থাপনা। শাহ আরেফিন মোকাম নামে পরিচিত। সেখানে প্রতিবছর হাজার হাজার ভক্ত-আশেকান মিলে ওরস করতেন।

 

১৩৭.৫০ একর আয়তনের টিলাটি একসময় ধর্মীয় স্মৃতি বাহক হিসেবেই পরিচিত ছিল। কিন্তু তিন দশক আগ থেকে ওই টিলা থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা পাথর উত্তোলন শুরু করেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকতে পাথরখেকোদের আগ্রাসন সুউচ্চ টিলা কেটে গভীর গর্ত তৈরি করে পাথর খেকোরা পাথর উত্তোলন শুরু করেন। পাথরখেকোদের থাবায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় সংরক্ষণ করে রাখা শাহ আরেফিনের আসনস্থল।

 

টিলা কেটে পরিবেশ ধ্বংস করার অভিযোগে ২০১৬ সালে পাথর উত্তোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় প্রশাসন। কিন্তু এর পরও থামেনি পাথর লুটের তান্ডব।

 

গত কয়েক মাস ধরে প্রশাসনের সাঁড়াশি অভিযানের কারণে সিলেটের সাদাপাথর ও জাফলংসহ সবকটি কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু শাহ আরেফিন টিলা থেকে চুরি করে পাথর উত্তোলন চালু রাখছে একটি চক্র। রাতের আঁধারে টিলা কেটে পাথর উত্তোলন করে চক্রটির সদস্যরা। টিলা কেটে তৈরি করা গভীর গর্ত থেকে প্রতিদিনই হাজার হাজার ঘনফুট পাথর উত্তোলন করে পাচার করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।

 

পাথর লুটের খবর পেয়ে সোমবার শাহ আরেফিন টিলায় অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম অভিযান চালিয়ে পাথর লুটের প্রমাণ পেলেও হাতেনাতে কাউকে আটক করতে পারেননি। অভিযানকালে পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত ৬টি লিস্টার মেশিন জব্দ করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

 

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম জানান, পাথরখেকোরা ইতোমধ্যে শাহ আরেফিন টিলা ধ্বংস করে ফেলেছে। টিলা ধ্বংস করে তারা পাথর লুট করেছে। এখন থেকে যে কোন মূল্যে ওই টিলা থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখা হবে। যারা শাহ আরেফিন টিলা ধ্বংস করে পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।##